হোক রি-ইউনিয়নে মনে মন মিলল মাস কমের

Updated By: Jun 21, 2016, 02:25 PM IST
হোক রি-ইউনিয়নে মনে মন মিলল মাস কমের

সৌরভ পাল 

হোক কলরব ফুলগুলো সব সেদিন লালও ছিল আবার নীলও ছিল। অসম্ভবেই সেদিন সবার সঙ্গে সবার মিল হয়েছিল। হল সেসব অযথা কথা, যা হওয়ার কথা ছিল না! মাছগুলো সব চিল না হয়ে ফুল হয়েছিল সেদিন। ইংরাজি ক্যালেন্ডারে দিনটা ছিল জুনের ১৮। শনিবার। ৭২ ঘণ্টা পেরিয়েছে। শনির দশা কাটিয়ে মঙ্গলেই লিখলাম, হোক রি-ইউনিয়নের 'মঙ্গলকাব্য'। 

"ব্যর্থতা থেকেই সাফল্য আসে সাংবাদিকতায়। অধিকরণের দুর্বলতা থেকেই আসে স্বাধীনতা।" সেদিন ছিল সম্পর্কের স্বাধীনতা। নীল রঙে মিশেছিল লাল। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নীল সাদা চাতাল স্মৃতিতে হয়ে উঠেছিল গভীর লাল। একটা রি-ইউনিয়ন, একটা এলামনাই, যেন বদলে দিয়েছিল সম্পর্কের সব ছোট আর বড় ব্যবধান। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় গম-গম করছিল, 'লেলে লে লে মাস কম'। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা বিভাগের হোক রিইউনিয়নে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেতে উঠল সম্পর্কের সম্মেলনীতে। 

সিলেবাস বহির্ভূত পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল ওরা কয়েকজন, কোয়লা (কোয়েল), রিমঝিম (শুভশ্রী) অলকা (অলকানন্দা), দেশি (দিশিকা), অরিত, কেষ্টা, এলা। আর হুল্লোড়ের সঙ্গী হল পঙ্কাই, 'দেবরাজ' ইন্দ্র, বলরাম, শিবা। খোঁজ খোঁজ! শুরু হল সেই সব মহানদের খোঁজ, যাঁদের বংশধর ওরা। ঐতিহ্যের ধারক ও বাহকদের পুনঃমিলন। কলকাতার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, অলি গলি থেকে লুকিয়ে থাকা সিনিয়রদের খোঁজ। মাস কমের নাড়ির টানে, সব্বাইকে চাই! বাক্সে বাক্সে পৌঁছে গেল আমন্ত্রণ, দাদা আসবে কিন্তু, দিদি আসবে তো? ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে হৈ চৈ, কী হল কী হল! আরে 'সি ইউ'-এর মাস কম কীসব একটা করছে? আন্দোলন নাকি? পরীক্ষা নিয়ে চাপ! আবার বিপ্লব? হ্যাঁ, বন্ধু সমাগমের বিপ্লব। 

অলকা নিজেই ভাসল, "১৮ জুন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের এলামনাই মিট। সাইকোডেলিয়া শেষমেশ সত্যি হল, তখন মনে কিছুটা শান্তি আর বেশ অনেকটা গর্ব অনুভব করলাম। একটা গোটা মাসের পরিশ্রমের ফল। গর্বের কারণটা অবশ্যই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমের প্রথম এলামনাই মিট। সব বন্ধুদের অবদান রয়েছে, আর যিনি ছাড়া এটা অসম্ভব ছিল, অধ্যাপক ডঃ তপতী বসু। প্রাক্তনদের সঙ্গে আলাপ-হাসি, ঠাট্টা, মজা সবকিছুর মধ্যে একটা অদ্ভুত খোলামেলা পরিবেশ। পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, সিনিয়রদের একটা সম্মান উপহার দিতে পেরে খুব-খুব-খুব উচ্ছ্বসিত। আসছে বছর আবার হোক"। 

"সাইকোডেলিয়া আমাদের সবার কাছে একটা স্বপ্ন ছিল। যেটা অবশেষে পূর্ণ হয়েছে। একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এতো ট্যালেন্ট আর গোটা মাস কম-কে একসঙ্গে করা। অনেক বড় ব্যাপার। এই রিউনিয়ন যেন হতেই থাকে, আসছে বছর আবার হবে", দিশিকার সাইকোডেলিয়া এটাই। 

দেবদূতের দেববাণী, "একদিনেই মিটে গেল সারা বছরের ঠাকুর দেখার শখ"। 

এলা, "১৮ জুন, স্ক্র্যাপ বুকে এই দিনটা সারা জীবনের জন্য রেখে দিলাম। স্মৃতির স্ক্র্যাপ বুক। আলো ঝলমল মুহূর্ত, কারও স্মৃতিচারণ, স্মৃতির জালবোনা, বড়-ছোট মিলে মিশে একাকার। হৈ হৈ-এর মাঝে কখন যেন মুহূর্তের অ্যালবাম বানিয়ে ফেলছিলাম। এটা সেদিনের রসদ যেদিন হয়ত আমরাও প্রাক্তন"। 
     

"বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না, আমি রব না রব না গৃহে", তাই বোধহয় বন্ধুহারাদের দল আবার বন্ধু ফিরে পেতে শনিবার বেলা ১১টায় সেন্টেনারি হলে। যাঁরা একদিন ক্লাসের বেঞ্চিগুলোতে যৌবন বিসর্জন দিয়েছিল, আজ যাঁদের কালো মাথায় ভিড় করেছে সাদা রঙ, তাঁরা সবাই হারিয়ে গেল হাততালিতে। 'হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দার জলে'। 'কোয়েলে মন মাতল কোয়েল প্রেমীদের'। 'বৃষ্টি হল রিমঝিম সুরে'। 'এলায় মন এলিয়ে দিয়ে পরমানন্দও তখন চৈতন্য'। 

মঞ্চ হঠাৎ র‍্যাম্পও হল, হল ফ্যাশনের লম্ফ ঝম্ফ আর পাউট। তবে যা ছিল সবথেকে বেশি, মেঘাতিথির গানের মেঘ, বৃষ্টি হল মনে। রনির রডোড্রেনডন কলিকাতার বুক চিরে হয়ে উঠল ট্রাম লাইন। 'টরাস' রাতুল দা সেদিন আর 'মোষ' নয় বরং মেষবালক। নিজে একদিন যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রেমের ভেলা উড়িয়ে ছিল, সেই মঞ্চেই সেদিন শিক্ষক রাতুল দা মুখোমুখি হল নিজের শিক্ষকের। ঋজু যেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রোগ্রামে কেবল প্রতীক সুরের শ্রোতা। যাঁদের টেলিভিশনে দেখা যায়, যাঁদের মত হতে চাওয়া, তাঁরা এত কাছে, একসঙ্গে, রাম-ঋত্বিক, সুদক্ষিনা-সোহিনি, মৃণালে মন, উফফ কি পেলাম! স্মৃতি বিজরিত চোখে তখন স্বরলিপিও। শুধু হল না, অনির্বানের বিয়েটা, ব্যাগ বন্দী গাঁদা ফুল, শেষে দোলের মত গায়ে মাখতে হল সবাইকে।   

দুর্যোধন বধের বদলে মঞ্চে ভীম বধ, আর চাতালে তখন রাম হরণ পালা। কোরাসে কোরাসে মঞ্চ থেকে একটা গান ভাসতে ভাসতে আসছে, 'আলবিদা'। আর কিছু বলার থাকে না, যখন তুমি বলে দাও আলবিদা। না, আলবিদা নয়, বরং শুরু। ঠাকুর দেখার দিন একটাই হয় না! দেবদূতদের জন্য ঠাকুরের পুজা হবে হর রোজ। 

 

"সাইকোডেলিয়ার একমাসের পথ চলা শেষ হল। অনেক স্মৃতি, অনেক ভালো লাগা, খারাপ লাগা সব জড়িয়ে। কিন্তু এই সাইকোডেলিয়া প্রাক্তন দাদা দিদিদের কাছে আসার সুযোগ করে দিল। জুনিয়র সিনিয়রের বাঁধ ভেঙে আমরা অনেকেই এখন বন্ধু। প্ল্যান করা, স্পনসর জোগাড় করা, কী কী ভাবে এগোবো! মাঝে মনে হল কিছুই হবে না। কিন্তু কথায় আছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। ভারাক্রান্ত মনে বিদায় জানালাম ১৮ জুনকে। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে। হেরেও জিতে যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করছিলাম। অনেক ভালোবাসা", কোয়েল বার্তা দিয়েই শেষ করলাম।    

.